মহাবিশ্বের পরিচিত সবচেয়ে বিশাল কাঠামো। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১০ বিলিয়ন আলোকবর্ষ, যা কল্পনার বাইরে। এটি গ্যালাক্সির বিশাল বিশাল শৃঙ্খল, যেখানে আলো, অন্ধকার, তারকা আর ব্ল্যাকহোল একসাথে বোনা মহাজাগতিক জাল তৈরি করেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গ্রেট ওয়াল এতটাই বড় যে এটি মহাবিশ্বের Cosmic Web-এর সবচেয়ে চমকপ্রদ ফ্রেম।
২) স্লোন গ্রেট ওয়াল:
প্রায় ১.৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ জুড়ে থাকা এই গ্যালাক্সি দেয়াল ২০০৩ সালে আবিষ্কৃত হয়। এটি কোনো দেয়াল নয়, বরং হাজার হাজার গ্যালাক্সির থ্রেডলাইন। কখনো কখনো মনে হয়, যেন মহাবিশ্ব নিজের চামড়ার উপর লম্বা আঁচড় এঁকে রেখেছে।
৩) লানিয়াকেয়া সুপারক্লাস্টার:
এটাই আমাদের মহাজাগতিক ঠিকানা। মিল্কিওয়ে, অ্যান্ড্রোমেডা, ট্রিলিয়ন তারকা সব মিলিয়ে আমরা এই বিশাল সুপারক্লাস্টারের অংশ। এর আকার ৫২০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ। এখানে সব গ্যালাক্সি ধীরে ধীরে একটাই কেন্দ্রের দিকে টানা পড়ছে গ্রেট অ্যাট্রাক্টর নামে এক রহস্যময় মাধ্যাকর্ষণ কূপের দিকে।
৪) গ্রেট অ্যাট্রাক্টর:
এটি দৃশ্যমান নয়। সরাসরি দেখা যায় না। কিন্তু আমরা অনুভব করি তার টান। পুরো লানিয়াকেয়া সুপারক্লাস্টার তাকে ঘিরে ঘুরছে। যেন মহাবিশ্বের গভীরে বসে থাকা এক অদৃশ্য দানব, যার মহাকর্ষ আমাদের পুরো অঞ্চলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। কী আছে সেখানে? সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল, অন্ধকার পদার্থ, নাকি অদেখা কিছু? রহস্য এখনো অমীমাংসিত।
৫) পাইসিস সেটাস সুপারক্লাস্টার কমপ্লেক্স:
একটি হিমালয়-সাইজের গ্যালাক্সি চেইন। দৈর্ঘ্য ১ বিলিয়ন আলোকবর্ষের বেশি। যেখানে সুপারক্লাস্টারগুলো পরস্পরের মধ্যে সংযুক্ত, যেন মহাবিশ্বে কেউ সুতো দিয়ে খুঁটিগুলোকে বেঁধে রেখেছে।
৬) Boss গ্রেট ওয়াল:
২০১৬ সালে আবিষ্কৃত। আকার ১ বিলিয়ন আলোকবর্ষের কাছাকাছি। যার প্রতিটি অংশে গ্যালাক্সি জমাট, ফাঁকা অঞ্চল, এবং গ্র্যাভিটির অদ্ভুত নকশা দেখা যায়। এ যেন মহাবিশ্বের আকাশে লেখা স্থির চিত্র।
৭) কসমিক ভয়েডস: মহাবিশ্বের শূন্য মরুভূমি-
এগুলোর কথা বললে রোমাঞ্চ বেড়ে যায়। ভয়েড হলো বিরাট ফাঁকা অঞ্চল, যেখানে প্রায় কোনো গ্যালাক্সিই নেই। আকারে এগুলো শতশত মিলিয়ন আলোকবর্ষ। গ্যালাক্সি যেখানে জন্মায় না, সেখানে এক অন্ধকার নিস্তব্ধতা—তবু সেগুলোও মহাবিশ্বের মহা স্থাপত্যের অংশ, কারণ শূন্যতাকে দিয়েই কাঠামো স্পষ্ট হয়।
এই স্ট্রাকচারগুলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড়ো নির্মাণ, যেন কোনো অদৃশ্য শিল্পীর হাতে আঁকা ওপেন এন্ডেড জ্যামিতি। এগুলো আমাদের বলে:
-মহাবিশ্ব সমান নয়।
-মহাবিশ্বের নকশা আছে।
-এ যেন এক বিশাল কসমিক জাল।
-গ্যালাক্সি, তারকা, ডার্ক ম্যাটার সবই এই জালের থ্রেড।
এই কাঠামোগুলো কীভাবে তৈরি হলো মহাবিশ্বের প্রথম দিকেই? উত্তর খুবই জটিল এবং এক অদ্ভুত রহস্যেঘেরা
বিগ ব্যাং এর কয়েকশো মিলিয়ন বছরের মধ্যেই এই মহাজাগতিক ওয়ালগুলো গঠন হতে শুরু করে অর্থাৎ কসমিক ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রুত কাজ করেছে! এরা আমাদের অভিভূত করে, কারণ পৃথিবী এবং আমাদের জীবন এই বিশাল নকশার ক্ষুদ্রতম একটি বিন্দু মাত্র।
