-->

বিগ ব্যাং-এর প্রমাণ

বিগ ব্যাং Big Bang 
যদি কেবল আলোর ঝলকানি না হয়ে এক অকল্পনীয় অন্ধকার থেকে এক গভীর রূপান্তর হয়ে থাকে? যুগ যুগ ধরে মহাবিশ্ব এক মহাজাগতিক শূন্যতায়, ঘোর কৃষ্ণতার এক অবস্থায় বিদ্যমান ছিল। এই গভীর রাত থেকে আলোর উদ্ভব কীভাবে ঘটলো, এবং অন্ধকার থেকে আলোকের এই মহাকাব্যিক যাত্রা আমাদের সবকিছু সৃষ্টির আদি উৎস সম্পর্কে কী বলে? চলুন জেনে দেখি-

এমন এক মহাবিশ্বের কথা ভাবুন যা কেবল অন্ধকার নয়, বরং ছিল অদৃশ্য – আমাদের গল্প এখান থেকেই শুরু।

তারার আগে, আলোর আগে, এক গভীর মহাজাগতিক কুয়াশা সবকিছুকে গ্রাস করে ছিল। এই আদিম অন্ধকার, শূন্যতার পরিবর্তে, সমস্ত অস্তিত্বের বীজ ধারণ করে ছিল – মৌলিক কণার এক ঘন, উত্তপ্ত প্লাজমা। আলো আটকা পড়ে ছিল, অবাধে ভ্রমণ করতে পারছিল না।

তারপর এলো সেই যুগান্তকারী মুহূর্ত: যখন মহাবিশ্ব যথেষ্ট ঠান্ডা হলো, তখন আলো তার ঘন আলিঙ্গন থেকে মুক্তি পেল।

এই ছিল "পুনর্মিলন যুগ" বা "রিকম্বিনেশন এরা", বিগ ব্যাং-এর প্রায় 380,000 বছর পরে। ইলেকট্রনগুলি পারমাণবিক নিউক্লিয়াসের সাথে একত্রিত হয়ে নিরপেক্ষ পরমাণু তৈরি করেছিল, প্রধানত হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম। হঠাৎ করে, মহাবিশ্ব স্বচ্ছ হয়ে উঠলো। এটি কেবল তত্ত্ব নয়; এই মুহূর্তের অবশেষ আমরা আজও আকাশে দেখতে পাই।

1960-এর দশকের মাঝামাঝি, বেল ল্যাবসের দুই প্রকৌশলী, আর্নো পেনজিয়াস এবং রবার্ট উইলসন, একটি অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার করে বসলেন। তারা ক্রমাগত একটি স্থির, ব্যাখ্যাতীত স্ট্যাটিক-এর মতো সংকেত সনাক্ত করছিলেন। এই "শব্দ" কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড, বা CMB – মহাবিশ্বের প্রাচীনতম আলো, বিগ ব্যাং-এর একটি আফটারগ্লো – হিসেবে প্রমাণিত হলো। এটি আক্ষরিক অর্থেই মহাবিশ্বের শৈশবের ছবি, যা আমাদের দেখায় যে মহাবিশ্ব স্বচ্ছ হওয়ার ঠিক পর কেমন ছিল। এর সূক্ষ্ম তাপমাত্রার পরিবর্তনগুলি ম্যাপ করা মহাবিশ্বের প্রাথমিক গঠন প্রকাশ করে – সেই ছোট অসম্পূর্ণতাগুলি যা শেষ পর্যন্ত গ্যালাক্সি এবং গ্যালাক্সি ক্লাস্টারে পরিণত হয়েছিল।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ আসে মহাবিশ্বের বিশাল দূরত্বে আলো ভ্রমণের প্রকৃতি থেকে: রেডশিফট। যখন একটি সাইরেন দূরে সরে যায় তখন তার শব্দের তীক্ষ্ণতা যেমন পরিবর্তিত হয়, তেমনি মহাবিশ্ব প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে আলোও প্রসারিত হয়, যা বর্ণালীর লাল প্রান্তের দিকে সরে যায়। এডউইন হাবলের যুগান্তকারী পর্যবেক্ষণগুলি দেখিয়েছিল যে প্রায় সমস্ত দূরবর্তী গ্যালাক্সি রেডশিফটেড, এবং তারা যত দূরে, তাদের রেডশিফট তত বেশি। এটি একটি প্রসারিত মহাবিশ্বের অকাট্য প্রমাণ, যা একটি একক উৎস – বিগ ব্যাং – এর দিকে সরাসরি নির্দেশ করে।

আদিম অন্ধকার এবং বর্তমান প্রসারের বাইরে, মহাবিশ্ব কী নতুন আলো প্রকাশ করবে?

আলো যখন বিশাল মহাবিশ্বকে আলোকিত করে, তখন ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জির মতো অদৃশ্য শক্তিগুলি এখনও আমাদের মহাবিশ্বকে আকার দিচ্ছে, যা এর মোট ভর-শক্তির বেশিরভাগ অংশ তৈরি করে। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মতো উন্নত টেলিস্কোপগুলির সাথে ক্রমাগত অনুসন্ধান মহাবিশ্বের অতীতে নতুন জানালা খুলছে, যা আমাদেরকে প্রথম আলোর মুহূর্তের আরও কাছাকাছি দেখতে এবং সম্ভবত, মহাজাগতিক আলোকসজ্জার ভবিষ্যৎকেও একবার দেখতে দেবে।

এক অকল্পনীয় অন্ধকার থেকে, আদিম প্লাজমার কুয়াশার মধ্য দিয়ে, আজ আমরা যে তারা এবং গ্যালাক্সির শ্বাসরুদ্ধকর চিত্র দেখি – মহাবিশ্বের অস্বচ্ছ থেকে স্বচ্ছ হওয়ার, রাত থেকে আলোতে আসার যাত্রা, এটি এযাবৎকালের সবচেয়ে গভীর গল্পগুলির মধ্যে একটি। আর আমরা সবেমাত্র এর অধ্যায়গুলি পড়া শুরু করছি।

- আল মামুন রিটন
সম্পাদক, বিজ্ঞান তথ্য।
ছবি: জেমিনি কর্তৃক অলংকৃত